বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস-২০২৪ আমাদের জন্য কি বার্তা দিয়ে গেল?

বাজারে বিদ্যমান কোকা কোলা, পেপসি কোলা, আরসি কোলা, মোজো আরো হরেক রকমের কোলা জাতীয় ড্রিংকস ছেলে বুড়ো সবাই একনামে চেনে, দেদারসে কেনে। আর বিয়ে বাড়িই হোক আর সূন্নাতে খৎনাই হোক, ভূরিভোজের পর দুচুমুক কোলাজাতীয় ড্রিংকস না গিললে যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠেনা!

জানেনকি ১৮৮৬ সালের কোন এক বসন্তের সন্ধ্যায় আমেরিকার আটলান্টার ডাউন টাউনেের ‘জ্যাকোব’ ফার্মেসীর সামনে একট্রা হৈ-হুল্লোড় চলছিল। একঘেয়েমি চা বা পানিয় খেয়ে মন ভরছিলনা পাবলিকের। ড. জন এস পেমবারটোন নামের একজন ফার্মাসিষ্ট চিন্তা করলেন কিভাবে আর একটু চনমনে স্বাদের ড্রিংকস তৈরী করা যায়। তাই তিনি দিনরাত গবেষনা করা গতানুগতিক ধারার বাইরে কোকা লিভস্, কোলা নাট্স্ আর ফ্রুকটোজ সিরাপের এক যুগান্তকারী রেসিপি তৈরি করে ফেললেন। হ্যা, আগে ফার্মেসীতে ওষুধের পাশাপাশি মন চনমনে করার পানীয় বিক্রি হতো!
তারপর কোকো কোলার ইতিহাস সবার জানা। শুধু যেটা মানুষ জানেনা তাহলো কোকা কোলা তৈরি করেছিলেন একজন ফার্মাসিষ্ট!

বাংলাদেশে ফার্মেসী পেশার ইতিহাস খুব কম সময়ের তা নয়। সেই ১৯৬৪ সালে এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার স্যারের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী পড়ানো শুরু হয়েছিল তারপর একে একে পাবলিক আর প্রাইভেট মিলিয়ে প্রায় শ’খানেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী পড়ানো হয়। এখান থেকে কি পড়ানো হয় বা ফার্মাসিষ্টরা কি করেন তা নিয়ে আপামর জনতা যেমন খুব অবগত নয়, তেমনি সরকার, আমলা এবং শিক্ষিত সমাজও খুব একটা ধারনা রাখেননা বা রাখার প্রয়োজন মনে করেন না। হয়ত আমরা যারা ফার্মাসিষ্ট আছি তারাই কখনো সেভাবে চেষ্টা করিনি আমাদের কার্যক্রম জানানোর ব্যাপারে। বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল অথবা ফার্মেসী পেশার সাথে নিয়োজিত বড়কর্তারাও জাতীয় ইস্যুতে ফার্মাসিষ্টদেরকে লাইমলাইটে নিয়ে আসতে পারেননি। যার কারণে সব সময়ই ফার্মাসিষ্টদের ভূমিকা পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে। যেকারণে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের কথা আসলে সেখানে ফার্মাসিষ্টদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোন পরিকল্পনা থাকেনা। বার বার বলা স্বত্বেও হাসপাতাল ফার্মাসিষ্ট বা ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিষ্ট হিসেবে ফার্মাসিষ্টদের নিয়োগ প্রলম্বিত হয়েছে। যদি বলি সত্যিকারের বৈষম্যের শিকার ফার্মাসিষ্টরা, যারা নিরবে নিভৃতে কেঁদেছেন তারপর দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

বিশ্বস্বাস্হ্য খাতে ফার্মাসিষ্টদের অবদান চিহ্নিত করা এবং তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই ২০০৯ সালে প্রথম বিশ্ব ফার্মাসিষ্ট দিবসের ধারণা আসে। International Pharmaceutical Federation (FIP) এর প্রতিষ্ঠা দিবস ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯১২। এই দিনের সাথে মিল রেখেই প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফার্মাসিষ্ট দিবস পালিত হয়। সময়ের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশেও স্বল্প পরিসরে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এবারে বিশ্ব ফার্মাসিষ্ট দিবসের মূল প্রতিপাদ্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের সাথে কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে। Pharmacists: meeting global health needs ( বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে ফার্মাসিষ্টদের প্রয়োজনীয়তা)।

কাজেই আসুন সবাই স্বাস্থ্যখাতকে সংস্কার করি। ওষুধের সঠিক উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রন, বিপনন, সংরক্ষন ও ব্যবহার নিশ্চিত করি। বিশ্ব ফার্মাসিষ্ট দিবসের প্রতিপাদ্য সফল করি।

মোঃ রেজাউল করিম
এম. ফার্ম, এমবিএ
মার্কেটিং ম্যানেজার
ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *